আমিরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়াসহ চলনবিলে শীতের শুরুতেই ঝাঁকে ঝাঁকে খাবারের সন্ধানে ছুটে আসছে পরিযায়ী পাখিসহ দেশীয় নানা প্রজাতির পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে চলনবিলসহ আশপাশের এলাকাগুলো। এ সুযোগে সৌখিন ও পেশাদার শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে এসব পাখি নিধন শুরু করছে।
এদিকে, নানা প্রজাতির পাখি শিকার করে বিক্রি করছে স্থানীয় হাট-বাজারে। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাখি নিধন বন্ধে কাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে পাখি শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বুধবার (৮ নভেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলনবিল এলাকার খাল, বিল, নালা ও জলাশয়গুলোতে কমছে পানি। জেগে উঠছে খেত। পাওয়া যাচ্ছে ছোট বড় মাছ। বিলে বোনা আমন ধানও রয়েছে। এসব মাছ ও ধান খাওয়ার লোভেই নানা প্রজাতির পরিযায়ী ও দেশীয় প্রজাতির পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে এ অঞ্চলে। কিন্তু বিষ-টোপ, জাল ও ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি শিকার করছে শিকারিরা। এতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পাখি নিধনে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
তাড়াশ ও উল্লাপাড়ার আলতাফ শেখ, শুকুর আলী, বেলাল খন্দকার, জুলমাতসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, ফসলের জমিতে পানি দেওয়ার সময় মাটির নিচে থেকে ওঠে আসা পোকামাকড়সহ খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাদা বক, শালিক, চড়ুই, ডাহুক, চ্যাগাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি। এ সময় একশ্রেণীর পাখি শিকারিরা পতঙ্গের ভেতরে বিষাক্ত কিটনাশক ঢুকিয়ে ছেড়ে দেয়। সেই পোকাগুলো খেয়ে পাখিরা মারা যায়। তখন পাখিগুলো ধরে কাছে রাখা ব্লেড, ছুরি দিয়ে জবাই করছে তারা।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা গেছে, রাতচোড়া, টোগা, বালিহাঁস, পানকৈড়, পারিযাতসহ দেশীয় প্রজাতির অনেকে পাখি। আর বর্তমানে চলনবিলের বিভিন্ন গ্রামে প্রতি এক জোড়া ভাড়ই বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, প্রতি জোড়া বালিহাঁস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টোগা প্রতি জোড়া ৯০ থেকে ১১০ টাকা, রাত চোরা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি জোড়া, বক প্রতি জোড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, উল্লাপাড়া, নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুর এলাকায় পাখি শিকার বন্ধে নিয়মিত কাজ করছে চলনবিল জীবও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে স্থানীয় প্রশাসনের জোরালো কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বন্ধ করা হচ্ছে না এসব পাখি শিকার।
চলনবিল জীবও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, চলনবিল এলাকায় ২০২০ সাল থেকে আমরা পাখি শিকারি বন্ধে কাজ করছি। আমরা মূলত পাখি শিকারিদের নিষেধ ও পাখি অবমুক্ত করে থাকি। এতে পাখি শিকারিরা ততোটা ভয় পায় না। কয়েক বছরে প্রায় দুই হাজার শিকার করা পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন। তবে প্রশাসন এ বিষয়ে একটু নজর দিলে কেউ আর অবাধে পাখি শিকার করতে পারবে না।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাখি শিকার জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে কেউ যদি পাখি শিকার করে এবং পাখি হাট-বাজারে বিক্রি করতে না পারে, এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নিয়ামুর রহমান বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা অপরাধ। এ অপরাধের জন্য কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। তবে পাখি শিকারের তথ্য পেলে অভিযান পরিচালনা করে পাখি শিকার বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে।